স্বতন্ত্র ৬ জনের বিপরীতে ১ নারী এমপি সংরক্ষিত আসন

 


দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। দেশের ইতিহাসে এবারের সংসদেই সর্বোচ্চসংখ্যক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী, ৩০০ আসনের সংসদে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হবেন ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য। আনুপাতিক হারে দলীয় বা জোটগত কোটা ভিত্তিতে নারী এমপিরা নির্বাচিত হবেন। অর্থাৎ ছয়জন সংসদ সদস্যের অনুকূলে একজন নারী এমপি থাকবেন। 

এখন পর্যন্ত ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের অনুকূলে অন্তত ১০ জন সংরক্ষিত নারী আসন থাকলেও শেষ পর্যন্ত কতজন স্বতন্ত্র হিসেবে টিকে থাকেন, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। স্বতন্ত্ররা কোনো দলে বা জোটে যোগ দিলে তারা সেই দলের সংসদ সদস্য বা ভোটার হিসেবে বিবেচিত হবেন। নির্বাচন আইনে দলীয় ও জোটগতভাবে একই নিয়মে অর্থাৎ ছয়জনে একজন নারী সংসদ সদস্যের কোটা নির্ধারণ হবে।

 সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পাটি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি মিলে জোটগতভাবে সংসদ সদস্য আছেন ২২৬ জন। এ ক্ষেত্রে বর্তমান হিসেবে অন্তত ৩৮টি সংরক্ষিত আসন পাবেন। তবে স্বতন্ত্ররা এই জোটে যোগ দিলে কোটার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জাতীয় পার্টি ১১টি আসন নিয়ে পাবে দুটি সংরক্ষিত আসন। ইতোমধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চলতি মাসেই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।


এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুন নূর দুলাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের দেখতে হবে স্বতন্ত্ররা কোনো দলে যোগ দেন কি না এবং কতজন স্বতন্ত্র হিসেবেই থাকেন। স্বতন্ত্ররা নিজেদের মধ্যে মোর্চা করে নির্বাচন কমিশনকে জানালে, নির্বাচন কমিশন তাদের নির্দলীয় জোট হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে কোটা অনুসরণ করে নির্ধারিত সংখ্যক (৬ জনে একজন) সংরক্ষিত নারী আসন বণ্টন করতে পারে। নিয়মানুযায়ী অন্যান্য দল ও জোটের মতো স্বতন্ত্রদের ভোটদানের জন্য ইসি আলাদা ব্যালটের ব্যবস্থা করবে।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখনো স্বতন্ত্ররা নিজেদের মধ্যে নির্দলীয় জোট বা মোর্চা করেননি। ফলে এখনি বলা যাবে না, তারা কতটি সংরক্ষিত আসন পাবেন। শেষ পর্যন্ত যতজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য থাকবেন, কোটা অনুযায়ী তাদের ছয়জনে একজন সংরক্ষিত নারী আসন পাবেন। তাদের ভোটের মাধ্যমেই সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন। কোটা অনুসারে সমান বা কম প্রার্থী থাকলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। আবার প্রার্থী বেশি হলে ভোটের মাধ্যমে বিজয়ীকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। 

১৯৯০ সালে সংবিধানের (দশম সংশোধন) আইনের মাধ্যমে সাধারণ ৩০০ আসনের বাইরে নারীদের জন্য ৩০টি আসন সংরক্ষণ করা হয়। পরে চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৪৫টিতে উন্নীত করা হয়। ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের ৬৫ (৩) অনুচ্ছেদের মাধ্যমে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০ করা হয়। ২০১৮ সালের সংশোধনীতে এই সংরক্ষণের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২৫ বছর। অর্থাৎ ২৫ বছর পর এই সংরক্ষণের বিষয়টি বাড়ানো হবে নাকি বন্ধ করা হবে, সেটি তখনকার সংসদ বিবেচনা করবে। সংবিধানের ৬৫ (৩) অনুচ্ছেদের আওতায় জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইনের ৬-এর ১ ধারায় বলা হয়েছে, সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পর ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এ আইনের ৩-এর ১ ধারায় বলা হয়েছে, সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সাধারণ আসনে নির্বাচিত সদস্যদের রাজনৈতিক দল বা জোটওয়ারি পৃথক পৃথক তালিকা করা হবে। ৩-এর ৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নির্দলীয় (স্বতন্ত্র) সংসদ সদস্য কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে যোগদান করলে যোগদানকারী সদস্য সংশ্লিষ্ট দল বা জোটের সদস্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। ৩-এর ৪ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটকে নিয়ে পৃথক জোট করলে সব জোট ও জোটের সব সদস্যের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন একটি পৃথক সদস্য তালিকা করবে। ৩-এর ৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট কোনো নির্দলীয় (স্বতন্ত্র) সংসদ সদস্যকে নিয়ে পৃথক জোট করলে সংশ্লিষ্ট জোটের অন্তর্ভুক্ত সদস্য সমন্বয়ে একটি পৃথক তালিকা করা হবে।

৩-এর ৬ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো নির্দলীয় সংসদ সদস্য কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে যোগদান না করে তিনি অন্য কোনো নির্দলীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে ঐক্য করে স্বতন্ত্র নামে কোনো নির্দলীয় জোট গঠন করলে সেই জোটের নামে পৃথক তালিকা করা হবে। তবে ৩-এর ৭ ধারায় বলা হয়েছে, এই সব জোট গঠনের বিষয়ে সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পর ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। 

এ ছাড়া ৩-এর ৮ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নির্দলীয় সদস্য কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে যোগদান না করলে এমন সদস্যদের নাম নির্দলীয় সদস্য তালিকা নামে একটি স্বতন্ত্র তালিকা করবে নির্বাচন কমিশন। তারা স্বতন্ত্র জোট হিসেবে নির্ধারিত কোটা অনুসারে সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীর মনোনয়ন ও ভোট দিতে পারবে। তাদের পছন্দে একজনের প্রস্তাবনা ও আরেকজনের সমর্থনে প্রার্থী দেওয়া যাবে। কোটার অতিরিক্ত প্রার্থী না থাকলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের।

 নির্বাচন আইন অনুযায়ী দল, জোট বা নির্দলীয় স্বতন্ত্র তালিকার প্রত্যেক সদস্যকে ভোটার করবে নির্বাচন কমিশন। প্রত্যেকটি দল, জোট এবং নির্দলীয় (স্বতন্ত্র) তালিকা অনুযায়ী আলাদা আলাদা ব্যালটের ব্যবস্থা করা হবে। তারা আলাদাভাবে তাদের মনোনীত সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের ভোট দেবে। নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকলে ভোট গ্রহণের প্রয়োজন হবে না, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হবে।


Theme images by Jason Morrow. Powered by Blogger.