গণঅধিকার পরিষদের নিবন্ধনের রাজ কাহন

 


একসময় বলা হলো নিবন্ধন পেতে গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বের হয়েছে ভিপি নুর! কিছুদিন আগে বলাবলি শুরু হলো, নিবন্ধন পেতে সরকারের সাথে আঁতাত করে আহবায়ককে অপসারণ করেছে ভিপি নুর! ১০ টি আসনের আশায় আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে ভিপি নুর! আপোষ বা আঁতাত করলে ভিপি নুরের নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদ আজ নিবন্ধন পেতো। কই পেলো না তো! আসলে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের পুরো প্রক্রিয়াটি একটা শুভঙ্করের ফাঁকি। কঠিন কঠিন শর্ত জুড়ে দিয়ে নিবন্ধনের মূলা ঝুলিয়ে নতুন নতুন দলকে নিজেদের বগলে বাগিয়ে নিতে চায় সরকার। ভিপি নুর তথা গণঅধিকার পরিষদ সেই ফাঁদে পা রাখে নি বিধায় নিবন্ধন পায় নি। যার বিরুদ্ধে রাজনীতি তার কাছেই চাইতে হয় নিবন্ধন। বিষয়টি কতটা হাস্যকর একবার ভাবুন!

অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এমতাবস্থায় দল নিবন্ধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গণঅধিকার পরিষদ উচ্চ আদালতে আইনী লড়াইয়ে যাবে কিভাবে? আহবায়ক ও সদস্য সচিব তো বিপরীতমুখী?

আপনারা জানেন, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সরেজমিনে পুনঃতদন্ত করেছে। তদন্তকালে জানা যায়, ২৮/০২/২৩ তারিখে আহবায়ক কমিটির কার্যকারিতা শেষ হয়েছে এবং পরবর্তী কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত উক্ত আহবায়ক কমিটি কার্যকর থাকবে। সেমতে ১০/০৭/২৩ তারিখে জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে গণঅধিকার পরিষদ নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক (নুর-রাশেদ পরিষদ) এবং উচ্চতর পরিষদ নির্বাচিত করায় পূর্বের আহবায়ক কমিটির কার্যকারিতা এখন আর নেই।

এখন প্রশ্ন হলো, ০১/০৭/২০২৩ তারিখে আহবায়কের অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে। গত ২৫/০৬/২৩ তারিখে দপ্তর সমন্বয়ক ৮৪ জন সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি অনাস্থা প্রস্তাব আহবায়ক বরাবরে প্রেরণ করলে আহবায়ক মহোদয় ০১/০৭/২৩ তারিখে একটি জরুরী সভা আহবায়ন করেন; কিন্তু উক্ত সভায় আহবায়ক মহোদয় উপস্থিত হন নি বরং কোরাম পূর্ণ হলে ১ নং যুগ্ম আহবায়কের সভাপতিত্বে সভার কার্য পরিচালনার নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে আহবায়ক মহোদয়ের অনুপস্থিতিতে উক্ত সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের স্বাক্ষরে আহবায়ককে অপসারণ করা হয়। ০১/০৭/২৩ তারিখে উক্ত সভায় আহবায়ক মহোদয় উপস্থিত থাকলে হয়তো সিদ্ধান্ত অন্যরকম হতো।

উল্লেখ্য, ২০/০৬/২৩ তারিখে আহবায়ক মহোদয় সদস্য সচিবকে একক সিদ্ধান্তে অব্যাহতি দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব নিযুক্ত করেন। আবার ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ১০/০৭/২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন এবং ফলাফল মেনে নেন। 

সর্বশেষ, প্রশ্নটি হলো কোন কারণ দেখিয়ে গণঅধিকার পরিষদ-এর নিবন্ধনের আবেদন প্রত্যাখান করেছে? জানা যায়, অপর্যাপ্ত উপজেলা কার্যালয় দেখিয়ে গণঅধিকার পরিষদ-এর নিবন্ধন আবেদন প্রত্যাখান করা হয়েছে। এতদবিষয়ে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশিত হলে সবকিছু জানা যাবে।

এইমূহুর্তে করণীয়?

সরকারের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করতে নির্বাচন কমিশনের এই হঠকারী ও অবিবেচনাসুলভ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রীট পিটিশনের মাধ্যমে আইনী প্রতিকারের জন্য লড়াই করবে গণঅধিকার পরিষদ। এছাড়াও রাজপথে কর্মসূচির মাধ্যমে সক্রিয় থাকবে গণঅধিকার পরিষদ। 

আশার আলো এই যে, এক দফা দাবীতে আন্দোলনরত কোন দলই বর্তমান দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। সেক্ষেত্রে এক দফা আন্দোলন সফল হলে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠিত হবে। সেক্ষেত্রে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনও গঠিত হবে। উক্ত কমিশন আবারও দল নিবন্ধনের গণবিজ্ঞপ্তি জারী করবে; অগণতান্ত্রিক শর্তও শিথিল করবে আশা করি। তাই এই মূহুর্তে দরকার রাজপথে যুগপতভাবে এক দফার আন্দোলন জোরদার করা। 

প্রকৃতপক্ষে, আপোষহীন রাজনীতি হলো আলো আঁন্দারের মাঝে রক্তিম পথ!

---------------------------

এসএম নুরে এরশাদ সিদ্দিকী 

অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট 

উচ্চতর পরিষদ সদস্য, গণঅধিকার পরিষদ-জিওপি

সহ-সমন্বয়ক, আইনজীবী অধিকার পরিষদ

Theme images by Jason Morrow. Powered by Blogger.